খবর সংগ্রহঃ বিডিনিউজ.কম
বাবা-মা অনেক আশা করে ছেলের নাম রেখেছিলেন ‘মেধা’। কিন্তু তার কোনো লক্ষণই যেন দেখতে পারছেন না তারা। তাই ছেলের কথা ভাবতেই তাদের মন খারাপ হয়ে যায়।
এই কষ্টের সঙ্গে নতুন আরেক সমস্যা যোগ হয়েছে। মেধাকে আজকাল বন্ধুরা ‘ফেল্টুস’ নামে ডাকা শুরু করেছে। শিক্ষকদের অনুগ্রহে প্রতি বছর টেনেটুনে পাস করাটাও মেধার কাছে আর ভালো লাগে না। কাউকে সে কিছু বলতেও পারে না।
পড়ালেখায় মেধা যতটা কাঁচা, ছবি আঁকায় ঠিক ততটাই যেন পাকা। কোন ছবিতে কোন রং ব্যবহার করতে হবে তা মেধা বেশ ভালো বোঝে। একেবারে বড় আঁকিয়েদের মতো! ফেল্টুস ডাকা বন্ধুরাও মেধার কাছ থেকে মাঝে-মধ্যে ছবি এঁকে নিয়ে যায়।
গতবার বিজয় দিবসে এলাকায় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় যে ছবিটির জন্য হাবলু প্রথমস্থান পেয়েছিল সেটি আঁকতে মেধাই ওকে পরামর্শ দিয়েছিল। কিভাবে শুরু, কি রং ব্যবহার করতে হবে সবকিছুই সে হাবলুকে বলে দিয়েছিল। বন্ধুর উপকারের কথা ভুলে যায়নি হাবলু। পুরস্কার নেওয়ার জন্য মঞ্চে উঠে হাবলু যখন বললো, ফেল্টুস আমাকে ছবিটি আঁকতে সাহায্য করেছিল, তখন সবাই কানাঘুষা করছিল ফেল্টুসটা আবার কে? এই নামটা এলাকার কেউ শোনেনি এর আগে।
একজন বলে উঠলেন- বুঝতে পেরেছি, মেধার কথা বলা হচ্ছে। ছেলেটা ভালো ছবি আঁকে। কিন্তু ছাত্র খুব একটা ভালো না। প্রতি বছর টেনেটুনে পাস করে। ওর জন্য বাবা-মাকে শিক্ষকরা প্রায়ই কথা শোনান।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে আন্তঃস্কুল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শুরুর প্রস্তুতি চলছে। স্কুল থেকে যে কয়েকজন ছেলেমেয়ের নাম দেওয়া হয়েছে তাতে মেধার নামও আছে। এ ধরণের প্রতিযোগিতায় সে এবারই প্রথমবারের মতো নাম লেখাচ্ছে। শিক্ষকরা মেধার সঙ্গে ছবি নিয়ে কথা বললেন। কোন ধরণের ছবি সে আঁকতে চায়? জিজ্ঞেস করলেন। মেধা জানালো, সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কৃষকদের একটি ছবি আঁকবে। মেধার আঁকা ছবিটি প্রতিযোগিতার জন্য জমা দেওয়া হলো। পুরস্কারের জন্য ছবি চূড়ান্ত করার কাজ শেষ হয়েছে।
কিছুক্ষণ পর পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। সবার মাঝে উৎকণ্ঠা। কে হচ্ছে প্রথম বিজয়ী! মেধা তেমন কিছু ভাবছে না। সে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি ছবি আঁকতে পেরেই যেন খুশি। মেধার বাবা-মাও এসেছেন। বসেছেন একেবারে শেষ সারিতে। তাদের ছেলের আঁকা ছবি দর্শনার্থীরা দেখছেন, এটাই বড় পাওয়া।
পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিযোগিদের নাম ঘোষণা শুরু হলো। ক্রমিক সংখ্যা এক এক করে সামনের দিকে এগুচ্ছে। আর মাত্র একজন প্রতিযোগীর নাম বাকি আছে। হঠাৎ মাইকে ঘোষণা হলো, বিষয় বৈচিত্র্য বিবেচনা করে এবারের আন্তঃস্কুল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার প্রথম বিজয়ী হচ্ছে দবির উদ্দিন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মেধা।
মঞ্চে ডাকা হলো মেধাকে। তখনো মেধার বাবা-মা একেবারে পেছনে বসা। তাদেরও মঞ্চে ডাকা হলো। শিক্ষকদের পা ছুঁয়ে সালাম করে বাবা-মাকে নিয়ে মঞ্চে উঠলো মেধা। সবাই এক দৃষ্টিতে মঞ্চের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রধান অতিথির কাছ থেকে পুরস্কার নিলো মেধা। এবার অনুভূতি বলার পালা। মেধাকে জিজ্ঞেস করা হলো এমন একটি সুন্দর ছবির ভাবনা তার মাথায় এলো কী করে?
মেধা বললো, আমার বাবার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর কথা প্রায়ই শুনি। উনি মাটি ও মানুষের কথা বলতেন। কৃষকদের নিয়ে অনেক অনেক ভাবতেন। বাবার সঙ্গে বসে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেখেছি। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘আপনার মায়না দেয় ওই কৃষক’। বাবা আমাকে বলেছেন, ‘মায়না’ মানে বেতন। দেশের জন্য কৃষকদের অনেক অবদান। বঙ্গবন্ধু তাদেরকে ভালোবাসতেন। তাই আমার মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধু আর কৃষকদের নিয়ে একটি ছবি আঁকবো।
মেধার আঁকা ছবিটি এমন- একটি বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু কৃষকদের সঙ্গে কথা বলছেন। সামান্য দূরে সবুজ-শ্যামল মাঠ। ক্ষেতের পর ক্ষেত। উপরে পাখি উড়ছে। অনেক দূরে নদী, গাছ-গাছালি, ঘরবাড়ি।
পুরস্কার হাতে মেধা যখন মঞ্চ থেকে নামলো বন্ধুরা তখন দুষ্টমির ছলে বলে উঠলো, ফেল্টুস, ফেল্টুস। সবাই তখন হাসতে শুরু করলো।
No comments:
Post a Comment